মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫১ অপরাহ্ন

করোনায় জীবনের ‘রেড জোন’

ফিচার ডেস্ক::

লাল রং বিপদ, আপত্তি ও বিপ্লবের প্রতীক। এক সময় নিষিদ্ধ ও আপত্তিকর এলাকাকে বলা হতো রেড লাইট এরিয়া। অধুনা করোনাকালে ‘রেড জোন’ বলতে অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী ভারতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা ও পরিধির নিরিখে এমন বিভাজন হয়েছে। এবং মারাত্মক ও বিপজ্জনক এলাকাকে ‘রেড জোন’র আওতাভুক্ত করা হয়েছে।

‘রেড জোন’ শনাক্তকরণের পর সেখানে জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। কি করা যাবে, কি করা যাবেনা, আসা-যাওয়া কেমন হবে, এসব ক্ষেত্রে ‘রেড জোন’ সমাজের অন্য অংশের চেয়ে আলাদা ও নিয়ন্ত্রিত। শারীরিক চলাচল সীমিতের পাশাপাশি সেখানে বসবাসরত মানুষের মানসিক পরিস্থিতিও যথেষ্ট ভারযুক্ত।

যদিও করোনার কারণে মানুষের জীবন এমনিতেই নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত হয়ে পড়েছে। ইচ্ছে করলেই কোথাও যাওয়া যাচ্ছেনা। অবাধে ও নির্বিঘ্নে ঘোরাঘুরিও করা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিনিয়ত একটি সতর্কতা ও আতঙ্কের মধ্যে চলতে হচ্ছে মানুষকে। তথাপি ‘রেড জোন’ আরো মারাত্মকভাবে সীমাবদ্ধ, বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রিত।

কেউই চাইবেননা, তার বা তার পরিবারের জীবন ‘রেড জোন’র মধ্যে প্রায়-বন্দি দশায় আবর্তিত হোক। না চাইলেও ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের নানা স্থান ‘রেড জোন’র আওতায় চলে এসেছে। করোনার ক্রমবর্ধমান বিস্তারের কারণে আপাত কঠিন হলেও এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে হচ্ছে সবাইকে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ডিসেম্বরে চীনে উদ্ভূত বিপদ সম্পর্কে বিশ্ব অজ্ঞাত ছিলনা। সকলের চোখের সামনে দিয়ে করোনার বিপদ বৈশ্বিক মহামারির আকার ধারণ করেছে। ৮০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ লাখের দিকে ছুটছে।

এসব খবর সবাই জানে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিচ্ছে। বেশ কিছু দেশ এই তাণ্ডবকে পুরোপুরি ঠেকিয়েও দিয়েছে। অনেক দেশ লড়ছে। বাকিরা পর্যদুস্ত হচ্ছে।

সরকার ও জনগণের সক্ষমতার নিরিখে দেশগুলো করোনার বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নিয়েছে, তেমন ফলই পেয়েছে। আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, তা-ও আমাদের কারণেই ভোগ করছি। ঈদ মার্কেটিং-এর লোভ সামলাতে পারিনি, একটি ঈদ বাড়িতে না গিয়ে ঘরে থাকতে পারিনি, স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করে ফ্রিস্টাইল চলাচল করেছি। ফলও হয়েছে তেমনি।

এখন চরম পরিস্থিতিতে আমাদের বসবাসের স্থানের চারপাশে করোনা চলে এসেছে। এজন্য অনেক জায়গায় ‘রেড জোন’ করা হচ্ছে। এবারও সতর্ক ও সাবধান না হলে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে ঘোরতর বিপদ নেমে আসবে, তা বলাই বাহুল্য।

জীবনের রং সবুজ। আশা ও উচ্ছ্বাস মাখানো। লাল জীবনের রং নয়, বিপদের চিহ্ন। সবুজ জীবনকে মানুষ লালের বিপজ্জনক রঙে রাঙাতে পারেনা। তবু যুদ্ধে, মারিতে, বিপদে জীবনের সবুজ সঙ্কেত নামিয়ে লাল সঙ্কেত দেখাতে হয়। আমাদের চারপাশে এখন তেমনি হচ্ছে।

করোনায় জীবনের ‘রেড জোন’ অতিদ্রুত কাটানোর পক্ষেই সবুজের অনুসারী মানুষের চিরায়ত অভিমত। এজন্য কিছুদিন কঠোর পরিস্থিতি মান্য করার বিকল্প নেই। সকলে যত সতর্ক ও সাবধান হবেন, ততই করোনাভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ কম পাবে। সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে হানা দেওয়ার সুযোগ না পেলে করোনা সর্বগ্রাসী দাপট দেখাতে পারবেনা। তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, জাপানের মতো করোনা সংক্রমণের হার শূন্যে নেমে বা কমে আসবে।

পুরো বিশ্বের মতো আমরাও আছি করোনার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে। এই যুদ্ধ জীবনের ‘রেড জোন’কে সবুজ, শান্ত ও নিরাপদ করার যুদ্ধ। ভাইরাস বনাম মানুষের এই যুদ্ধে জয় আনতে হলে প্রতিনিয়ত লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com